পাল্টাপাল্টি হামলায় সংঘাত তীব্রতর হয়ে চরমে উঠেছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে। গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত উভয় দেশই একাধিকবার হামলা করেছে একে অন্যের মাটিতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন মারা গেলেও ইরানে নিহত হয়েছে ২২৪ জন। অপরদিকে আহত হয়েছে সহস্রাধিকের বেশি। এদিকে তেহরান ও পশ্চিম ইরানজুড়ে বোমা হামলা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নাগরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমা গণমাধ্যম, বিশেষ করে বিবিসি সাংবাদিকরা ইরানের ভেতর সরাসরি রিপোর্টিং করতে পারছেন না সরকারিভাবে আরোপিত সীমাবদ্ধতার কারণে, ফলে নিরপেক্ষ তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘এই মুহূর্তে’ সংঘাতে (ইরান-ইসরাইলের) জড়িত নয় বলে নিশ্চিত করার পর, সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা সম্ভব যে, যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হতে পারে’। তার এ কথার পর দক্ষিণ চীন সাগরে নির্ধারিত গন্তব্য বাতিল করে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ বহনকারী রণতরী ইউএসএস নিমৎজ। আন্তর্জাতিক জাহাজ ট্র্যাকিং সংস্থা মেরিন ট্রাফিকের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। তবে ইসরায়েলি আক্রমণের মুখে থাকাকালীন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনা ইরান করবে না বলে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে জানিয়েছে তেহরান।
গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের অতর্কিত হামলার পর তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার ভোরেও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। গত রোববার দিবাগত রাত থেকে শুরু করে গত সোমবার ভোরেও ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস এর দফায় দফায় ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার সর্বশেষ দফা শুরু হয়। এ সময় তেল আবিব, হাইফা এবং অধিকৃত অঞ্চলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে, যেমন বেনি ব্রাকের লক্ষ্যবস্তুতে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসনের জবাবে এই হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের ওই হামলায় সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষসহ কয়েক ডজন ইরানির জীবন কেড়ে নেয়। গত চার দিনে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এটি ইরানের সবচেয়ে ভারী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা, কারণ ইসরায়েলি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তেল শোধনাগারগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারী ওয়ারহেডের কারণে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আরও ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া, আইআরজিসি স্পষ্টতই সর্বশেষ অভিযানে ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। উচ্চ গতির এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সহজেই ইসরায়েলের অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাজিত করতে পারে বলেও জানানো হয়। জেরুজালেমে অবস্থিত বিবিসির মিডল ইস্ট ব্যুরো চিফ জো ফ্লোটো বলেছেন, সারারাত ধরে ইসরায়েলের মানুষজন আরও রকেট হামলার আশঙ্কায় সজাগ ছিল। ঠিক রাত ১টার আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালাচ্ছে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি যাওয়ার নির্দেশ দেয়। চার ঘণ্টা পর আসে পাল্টা জবাব যা এই সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বলেই মনে হয়েছে। পুরো দেশজুড়ে সাইরেন বাজতে শুরু করে, এরপর কয়েক মিনিট ধরে বিস্ফোরণের গর্জন শোনা যায় এতটাই তীব্র ছিল যে, আমি যে ভবনে আছি তা কেঁপে উঠেছিল। পরবর্তীতে তিনি জানান, আমি এখনই একটি আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের প্রথম ভিডিওগুলো দেখেছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে ভবনের সামনের অংশ উড়ে গেছে, রাস্তাজুড়ে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে ইরানজুড়ে চালানো ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১২৮ জনের মৃত্যুর খবরের চেয়ে এটি (নতুন সংখ্যা) প্রায় একশ বেশি। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অন্তত ১,২৭৭ জন আহত হয়েছে বলেও জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত রোববারের হামলায় ইসরায়েলের সবশেষ সামরিক হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি নিহত হয়েছেন। তেহরান বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদ সংস্থা তাসনিম এবং ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, গত রোববার ইসরায়েলি হামলায় কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকেক ও কমান্ডার মোহসেন বাকেরির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, আমি আপনাকে বলতে পারি যে, আমরা তাদের (ইরানের) প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তার সহকারীকে তেহরানে পেয়েছি। এদিকে ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮-এ পৌঁছেছে। এছাড়া আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ জনে। এর আগে পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল ইসরায়েলি চ্যানেল ১২। দেশটির জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডামের (এমডিএ) বরাত দিয়ে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে এমডিএর বিবৃতির বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সোমবার মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে চালানো ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ‘৭০ বছরের কাছাকাছি বয়সি দুই নারী, দুই পুরুষ ও আরও এক ব্যক্তি রয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এখন পর্যন্ত এমডিএ ৯২ জন আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহতদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সি এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। এমডিএ জানিয়েছে, চারটি স্থানের মধ্যে দুটিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোমবার ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইরানি হামলার জন্য তেহরানের বাসিন্দাদের ‘মূল্য দিতে হবে’। অন্যদিকে, ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মাদ বাকের গালিবাফ ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শত্রুকে আমরা ‘জাহান্নাম উপহার’ দেবো।
দক্ষিণ চীন সাগর থেকে রওনা দিয়েছে মার্কিন রণতরী : ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে চলমান ব্যাপক সংঘাতের মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে নির্ধারিত গন্তব্য বাতিল করে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে যুদ্ধজাহাজ বহনকারী রণতরী ইউএসএস নিমৎজ। আন্তর্জাতিক জাহাজ ট্র্যাকিং সংস্থা মেরিন ট্রাফিকের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমা দিয়ে ভিয়েতনাম উপকূলের দিকে যাচ্ছিল ইউএসএস নিমিৎজ। আগামী সপ্তাহে ভিয়েতনামের উপকূলীয় শহর দানাং সিটি’তে পৌঁছার কথা ছিল এই এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার রণতরীর। আগামী ২০ জুন নিমিৎজের ক্রুদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান হওয়ারও শিডিউল ছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে ইএসএস নিমিৎজ দিক পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে রওনা দিয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের পশ্চিম দিকে পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগর অবস্থিত। মেরিন ট্রাফিক ছাড়াও দু’টি সূত্র রয়টার্সকে ইউএস নিমিৎজের গতিপথ বদলানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ দুই সূত্রের মধ্যে একজন ভিয়েতনামের এক কূটনৈতিক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ২০ জুন দানাং সিটিতে নির্ধারিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এ ইস্যুতে আরও বিস্তারিত জানতে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়-এ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ‘ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর রুটিন উপস্থিতি’র অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ইউএসএস নিমিৎজকে এ অঞ্চলে নিযুক্ত করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড।
ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করল ইরান : ইসরায়েলি আক্রমণের মুখে থাকাকালীন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনা ইরান করবে না বলে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও ওমানকে জানিয়েছে তেহরান। বিষয়টির সাথে অবগত একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। কারণ চতুর্থদিনের মতো উভয়পক্ষ সংঘাতের তীব্রতা বাড়িয়েছে এবং পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে। এতে বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে বলেও জানানো হয়। ইরান কাতারি এবং ওমানির মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলি আক্রমণের প্রতি ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানো সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই তারা কেবল গুরুতর আলোচনা চালাবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ‘আক্রমণের মুখে থাকা অবস্থায় তারা আলোচনা করবে না।’
এনপিটি থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান : ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাঈল বাকাঈ-এর বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের সংসদ বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে স্বাক্ষরিত নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) থেকে সরে আসার জন্য একটি আইন প্রণয়নের কাজ করছে। তবে তিনি এটিও স্পষ্ট করেছেন যে, তেহরান গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে অবস্থান বজায় রাখছে। ১৯০ সদস্যবিশিষ্ট এই এনপিটি চুক্তি ১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৭০ সালে কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ছাড়া অন্য সব স্বাক্ষরকারী দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত থাকতে হয়। তবে শান্তিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারবে, যা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর, ইরান ধাপে ধাপে এই চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে পিছিয়ে আসতে শুরু করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তা ইরানের অর্থনীতিতে গভীর আঘাত হানে।
ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো ইয়েমেন : এবার ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইয়েমেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সংবাদে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইরেন বেজে ওঠে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান মোট ৩৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ইসরায়েল লক্ষ করে নিক্ষেপ করে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের অন্তত ৩০টি স্থানে আঘাত হেনেছে বলে জানা গেছে। এদিকে, ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ভবনের কাছে ?‘ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে’ সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের খোঁজে বিশ্ব, গোপন আস্তানা নিয়ে যত প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাবেক উপ-পরিচালক জেনারেল ফর সেফগার্ডস অলি হেইনোনেন বলেছেন, ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবস্থান ঠিক কোথায় তা আমরা পুরোপুরি জানি না। হেইনোনেন মনে করেন, ইসরায়েল সম্ভবত তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। রেডিও ফোর-এর ‘টুডে’ প্রোগ্রামে তিনি বলেন, নাতাঞ্জ স্থাপনার পুনরুদ্ধারে অন্তত কয়েক বছর সময় লাগবে। ফোর্দো স্থাপনারও একই অবস্থায়। ইসরায়েলের বোমা হামলার পর এটি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। কিন্তু প্রধান প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে হেইনোনেন জানিয়েছেন, ইরান তাদের ৪০০ কিলোগ্রামের বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় সংরক্ষণ করছে। তিনি বলেন, যদি তাদের কোনো গোপন আস্তানা থাকে, যা খুব বড় হতে হবে এমনটা না এবং তারা গোপনে পারমানবিক অস্ত্র বানানোর মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে যেখানে আইএইএ-এর নজরদারি নেই, তাহলে আমাদের বড় সমস্যা হয়ে যাবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ইরান নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনায় যাওয়াই সবচেয়ে ভাল উপায় হবে। তবে তিনি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি। ভন ডার লায়েন বলেন, তিনি টেলিফোনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে একমত হয়েছেন। ইরানের কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়, এতে কোনো প্রশ্নই নেই। আগে ভন ডার লায়েন গাজায় ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন, জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থার সঙ্গে ইরানের অসহযোগিতা করছে। এর মানে ইসরায়েল নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রাখে। ইরানই এই অঞ্চলের প্রধান অস্থিতিশীলতার উৎস।